বাংলা একাডেমীতে লেখক প্রকাশকদের মতবিনিময় সভা
নিউইয়র্কে ৪ দিন ব্যাপী বাংলা বইমেলা ২৮ জুলাই থেকে শুরু
- আপডেট সময় ০৭:২৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২
- / ৯০০ বার পড়া হয়েছে
সারা পৃথিবীতে বাংলা বইমেলা ভিত্তিক যে সংস্কৃতি তৈরী হয়েছে, তা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের হাত ধরে শুরু হয়েছে। তিন দশক ধরে একটি বেসরকারী সংগঠন বাংলা ভাষা সংস্কৃতিকে যে মমত্ব নিয়ে সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে তা অনুকরণীয়। ৩১তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা যাতে আরো বেশি অর্থবহ হতে পারে সেজন্য আমরা আরো বেশি করে সহযোগিতার হাত বাড়াবো। ৯ জুন সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে লেখক প্রকাশকের মত বিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে অনুষ্টিত এ মতবিনিময় সভায় ৩১তম নিইইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক গোলাম ফারুক ভূঁইয়া তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন আমরা গত ত্রিশ বছর ধরে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে বাংলা ভাষার একটি বইমেলা করে চলেছি। গত দুই বছর কোভিড-১৯ এ সারা পৃথিবী ক্ষত-বিক্ষত। কিন্তু আমরা ২০২০ তে ভার্চুয়াল প্রথম বাংলা বইমেলা করে সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষার লেখক পাঠকদের একইসূত্রে যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। গত বছর নিউ ইয়র্কে স্বল্প পরিসরে বইমেলার আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এবার ৩১তম বাংলা বইমেলায় বাংলাদেশের অধিক সংখ্যক লেখক ও প্রকাশক যাতে যোগ দিতে পারেন তার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি। বইকে আরো বেশি প্রাধ্যান্য দিতে আমাদের পুরো কমিটি কাজ করে চলেছে। তার বক্তব্যে তিনি বইমেলায় যোগ দেয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাতে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, একুশের গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে বিশ্বজিত সাহার হাত ধরে বহির্বিশ্বে বাংলা বইমেলার শুরু হয়। ১৯৯২ সালের পূর্বে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বইরে কোথাও বাংলা বইমেলা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ইতিহাস, ইতিহাসই। আজ সারা পৃথিবীতে বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা ধারণ করতে হবে, যার প্রচলিত অর্থ হলো বই। সে বই শুধু হরফের অক্ষরে নয়, আমার মনেও লিখিত হতে পারে। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আরো বলেন, আজ যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলার যে জয়গান আজ বিশ্বজুড়ে- নানান প্রতিক‚লতার মাঝেও অদম্য উদ্যোগে কাজ করে চলেছেন, সেই ব্যক্তির নাম মুক্তধারা ও বিশ্বজিত সাহা। আমি বইমেলায় যেতে পারি বা না পারি তার থেকেও বড় প্রয়াস বাংলা ভাষার এই মহাযজ্ঞে আমরা সকলে যদি সহযোগিতার হাত বাড়াই তাহলেই এই উদ্যোগের সফলতা আসবে।
এছাড়াও তিনি বলেন- বইটাকে বই হিসেবে প্রকাশ করুন। যদি অনুবাদ বই হয় সেটিকে অবশ্যই পরীক্ষা করে প্রকাশ করুন। না হলে এটি অপঅনূদিত বই, অনূদিত নয়। যদি ভালো মানের প্রকৃত বই হয়, তাহলে সেটি দশ বছর পর হলেও এর পিছনের বিনিয়োগ উঠে আসবে।
আগামী ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ৩১তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে লেখক ও প্রকাশকদের সাথে মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’।
সভার বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট নাট্যজন ও নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলার উদ্বোধক রামেন্দু মজুমদার বলেন বাংলা একাডেমির বই মেলার জন্য আমার যে আগ্রহ ও ভালোবাসা তেমনি নিউ ইয়র্ক বইমেলার জন্যও আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলায় প্রকাশক-লেখকরা পয়সার টানে যান, বিশেষ করে প্রকাশকদের এই ধরণের কাজে সরকারী প্রণোদনা থাকা প্রয়োজন। বইমেলা ছাড়াও নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলায় যেসব সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় তাও খুব হৃদয়গ্রাহী। এগুলো বাংলা সংস্কৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিগত ৩০ বছর ধরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বাংলা বই মেলার কথা তুলে ধরে বিশ্বজিত সাহা বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে নিউ ইয়র্ক বইমেলা আরো সুন্দর ও বড় আকারে করা যাবে। প্রবাসে বাঙালি কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রসারে তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক নিউইয়র্ক বইমেলায় তার অংশ গ্রহণের স্মৃতিচারণ করেন। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ রবিউল হক বলেন- এই বিশাল আয়োজনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বড় ধরনের একটি তহবিল বানানো দরকার। নিউ ইয়র্ক বইমেলার আয়োজকরা যে এতোদিন ধরে মেলাটি চালিয়ে যাচ্ছেন এ জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। উপস্থিত লেখক প্রকাশকদের অনেকেই বই ও অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা লেখা প্রসারের উপর গুরুত্ব দেন। অনুবাদ বই নিয়ে সতর্ক করে দেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন। লেখক সংগঠক আবু সাইদ শাহীন বইমেলা নিয়ে নস্টালজিক স্মৃতিমন্থন করেন। ছোট কাগজ লোক সম্পাদক অনিকেত শামীম নিউ ইয়র্কে মুক্তধারার আতিথেয়তার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকাশকদের মধ্যে সময় প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ, অনন্যার মনিরুল হক, বাতি ঘরের জাফর আহমেদ রাশেদ, অঙ্কুর প্রকাশনীর মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, শ্রাবণ প্রকাশনার রবীন আহসান, বই ঘরের মাধবচন্দ্র দাস, কাকলী প্রকাশনার একে নাসির আহমেদ সেলিম, আকাশ প্রকাশনার আলমগীর সিকদার লোটন, ধ্রুবপদ পাবলিশিং-এর আবুল বাসার ফিরোজ এবং ওয়ার্কাস পার্টির প্রকাশনা বিভাগের মাহমুদুল হাসান মানিক সহ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন।
উল্লেখ্য, সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর পরিচালক মোঃ মোবারক হোসেন, ডা. মোহাম্মদ হাসান কবীর, সমীর কুমার সরকার, নুরুন্নাহার খানম, মোঃ আফজাল হোসেন, জি. এম. নিজানুর রহমান, ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদ, ড: সাইমন জাকারিয়া, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী নিপু শাহাদাত, লেখক ফারহান ইশরাক, মোজাফফর আহমেদ, বাবুল বিশ্বাস, লেখক স্বকৃত নোমান, ইফাত রুপা জামান, প্রবাসী কবি আবু সাইদ শাহীন, একটিভিস্ট আনিসুল কবির জাসির, কবি সোহাগ সিদ্দিকী সহ আরও অনেক গুণিজন।